পোস্টগুলি

2023 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মীরা

ছবি
 কালচক্রের গতির নিরিখে ইতিহাস যে কখন কিংবদন্তি হয়ে যায়, তা নির্ণয় করা বড় দুষ্কর। দ্বাপর যুগের দ্বারকার একচ্ছত্র চক্রবর্তী সম্রাট এই গতিতেই তাঁর মানবীয় কর্ম সমূহকে ছাপিয়ে ঈশ্বর হয়ে উঠেছেন। তাঁকে কেন্দ্র করে রচিত সাহিত্যের সীমা নাই। ঠিক তেমন ভাবেই হয়ত মোঘল আমলের এক রাজপুত রাজকন্যা আজ স্থান পেয়েছেন মানুষের পূজা স্থলে। যদিও দেবতা বিজ্ঞানের অতি ক্ষীণ বোধের থেকেই মনুষ্যে দেবত্ব আরোপের প্রবণতা প্রবল হয়। মনুষ্যের মধ্যে দৈব গুণাবলী থাকা অবিশ্বাস্য নয়। কিন্তু সাক্ষাৎ দেবতা হয়ে ওঠা যেকোনো মানুষের পক্ষেই অসম্ভব। সূর্যযানের রশ্মিমণ্ডল মনুষ্য বাসযোগ্য নয়। বৈদিক বাঙময়ের কেন্দ্রে নিহিত তত্ত্ব সমূহের ঐকান্তিক বিশ্লেষণ করে আচার্য সায়ন তাঁর বেদের উপক্রমণিকাতে এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাহলে কি দেবতুল্য মনুষ্য পূজ্য নন? অবশ্যই পূজ্য; মান্য; অনুসরণীয় এবং কিছু ক্ষেত্রে অনুকরণীয়ও। বিচারের অসম্পূর্ণতা তখন তৈরি হয়, যখন উক্ত কর্তব্যগুলি আমরা কেবল দেবতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে ধরে নিই।   পুজ্যতা এবং দেবত্ব পৃথক। এবং সেই পার্থক্য বোধের জন্য যেটুকু অনুশীলন এবং অধ্যয়নের প্রয়োজন, দীর্ঘ প্রায় ৯০০ বছরের যবন এবং ম্

কুরুক্ষেত্র গল্প না ইতিহাস?

ছবি
अर्णांसि चित्पप्रथाना सुदास इन्द्रो गाधान्यकृणोत्सुपारा । শাস্ত্রবাক্যে সংশয় করা আমাদের ছোটবেলা থেকে মজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে শাস্ত্র বাক্যে অচল বিশ্বাস পরমার্থ সাধনের একমাত্র পন্থা, সেখানে আমাদের চিরাচরিত ব্রিটিশ ঘেঁষা শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের সেই শাস্ত্রবাক্যেই চূড়ান্ত অবিশ্বাসের বীজ বপন করে দিয়েছে। এর ফলশ্রুতি স্বরূপ আমরা বেদবাক্য, আগমবাক্য, গুরুবাক্যের ওপর এক লহমায় চূড়ান্ত বিশ্বাস আনতে পারি না। কিন্তু এই ধরণের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমাদের একটি উপকার হয়েছে। উপকারটি হল, যে আমরা বেদবাক্য, আগমবাক্য, গুরুবাক্যের ওপর এক লহমায় চূড়ান্ত বিশ্বাস আনতে পারি না। প্রশ্ন করি। উত্তর খোঁজার জন্যেই প্রশ্ন করি। তাই নিতান্ত অভদ্র না হলে, আমাদের প্রশ্নগুলো "পরিপ্রশ্নেন সেবয়া" ই হয়ে থাকে। সেই উত্তর পাওয়ার পরে আমাদের যে বিশ্বাসটি জন্মায় সেটি হয় একেবারে মৈনাক পর্বতের মত; নিরন্তর অজস্র গগনচুম্বী তরঙ্গের মাঝেও নিশ্চল। শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য আমাদের এই মনোবৃত্তি আদর্শ নয়। কিন্তু তাই বলে শাস্ত্র অধ্যয়ন থেকে আমরা বিরত থাকিনি। "ব্রাহ্মণঃ নিঃশ্রেয়সঃ স্বাধ্যায়ঃ অধ্যেতব্যঃ" এই শ্রুতিবাক্যের অ

শ্রী শ্রী মনসা

ছবি
দুপুর পর্যন্ত অজস্র কোলাহলমুখর, শশব্যস্ত পুরুলিয়া শহর বিকেল পড়তেই ক্রমে ক্রমে নিঃশব্দ হয়ে আসে। রাত্রি দশটা এগারোটা পর্যন্ত যেসব দোকানে ভিড় জমা থাকত, বিকেল চারটে বাজতেই তাদের ঝাঁপ এক এক করে বন্ধ হতে থাকে। চূড়ান্ত যানজটে যেসব রাস্তাঘাটে দু পা চলা দায়, সন্ধ্যা নামতে সেইসব রাস্তা শুনশান। রাস্তায় কেবল নিজের গ্রামে ফিরে যাওয়ার উদগ্র ব্যাকুলতায় কিছু বাইক আরোহী। তাদের জীর্ণ backpack, মুখে সারাদিনের ক্লান্তি, কিন্তু চোখে আশা ঠিক সময়ে বাড়ি পৌঁছানোর। কারণ ফিরে গিয়েই বিধিবৎ স্নানাদি করে, নতুন ধুতি পরে প্রস্তুত হতে হবে। প্রায় নির্জন, অন্ধকার, নিস্তব্ধ পুরুলিয়া শহরের রাস্তায় রাস্তায় কিছুক্ষণ পরে পরেই কেবল একদল মানুষ সিক্ত বসনে নিজের মাথায় একটি ফণীমনসার ডাল ধরে, তার নিজের সামর্থ্যমত বাদ্যাদির সাথে কাছের কোন জলাশয়ের দিকে চলেছে শোভাযাত্রা করে। রাস্তায় আর কিচ্ছু নেই। সারা শহর জুড়ে একটাই উদ্যোগ, শ্রী শ্রী ভগবতী সর্পরাজ্ঞী মনসার পূজা। পুরুলিয়া শহরের বৃহত্তম আনন্দ উৎসব।  সন্ধ্যা নামে। রাস্তাঘাট আরও ফাঁকা হয়ে আসে। শোভাযাত্রার দল বাড়তে থাকে। কিছু শোভাযাত্রায় দেবীর মূল ঘট আর ফণীপত্রিকা

শ্রী শ্রী মৎস্য বারাহী (পর্ব ১)

ছবি
 ২০১৭ সালের ঘটনা। ফেসবুকের ফিডে একটি পোস্ট আসে। গুণলয়ানন্দ স্বামীর লেখা একটি যাত্রা বিবরণী। শ্রী রামকৃষ্ণ মিশনের এই সন্ন্যাসীর লেখনীতে উড়িষ্যার এক শক্তি পীঠের বর্ণনা ছিল। লেখাটি দেখে মনে করে রেখেছিলাম, একবার যেতে হবে। মনে ছিল দুটি মূল শব্দ, শ্রী শ্রী বারাহী আর সহস্রলিঙ্গ। তারপর সময় বছর দুই তিন পেরোতেই জীবনের মোটামুটি একটু শান্ত সময় খণ্ডে মনে হল, এই সময় দর্শন করে আসি। উড়িষ্যার শ্রী শ্রী বারাহী শক্তিপীঠ। সাধারণত উড়িষ্যা রাজ্যে এই ধরনের কোন দেবস্থান দর্শনে বা সন্ধানে বেরোলে, বিশেষত যার সবিশেষ উল্লেখ ইন্টারনেটে পাওয়া দুষ্কর,  প্রথম বেস ক্যাম্প হয় শ্রীক্ষেত্র। সেইখান থেকেই এবার স্থানীয় দের সাথে কথা বলে বলে খুঁজে বের করা।  এবারেও তাই করা হল। কিন্তু শ্রীক্ষেত্রে গিয়ে হাজার সন্ধান করেও কোন বারাহী শক্তিপীঠের সন্ধান পেলুম না। শেষে সমুদ্রের তীরে চায়ের দোকানে একজন ট্রাভেল এজেন্টের সাথে আলাপ হতে, তিনি তাঁর ভাঙা বাংলায় বললেন, "শক্তিপীঠ কিনা জানি না, দাদা। তবে এখান থেকে মোটামুটি ৫০ কিলোমিটার দূরে এক প্রাচীন মন্দির আছে। সেই মন্দিরে দেবী বারাহীর পূজা হয়।"  পরদিন সকালে হোটেলের কাছ থেকে একটি বা

যাত্রা সাহিত্য

 ন তুন শিখলাম, যাত্রা সাহিত্য বলে একটা ব্যাপার হয়। ঠিক "ভ্রমণ কাহিনী" নয়, "যাত্রা সাহিত্য"। দুটোর মধ্যে যে একটা সূক্ষ্ম ভেদ রয়েছে, তা পাঠক মাত্রেই কিঞ্চিৎ আন্দাজ করতে পারছেন বই কি! তা, সেই ভাবে ভেবে দেখলাম, যে এই ভাবে কখনও ভেবে দেখিনি তো! তাই আবার, ছোটবেলার লেখার খাতায় লিখতে এলাম। নতুন করে পুরনো জিনিস ভাবতে হলে, লিখতে লাগে। যাত্রার পথের সাথে এই শরীরের আত্মীয়তা তো আর আজকের নয়; অনেক পুরনো। বরং বলতে গেলে, কয়েক জন্মের পুরনো। কখনও কখনও হয়ত বা কোন বাদলার রাতে স্বপ্নে দেখা যায়, সেই প্রথম দিনের গল্প; যেদিন ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিলাম। কিছু একটা খুঁজতেই নেমেছিলাম। কিন্তু সেটা যে ঠিক কি ছিল, এত জন্ম পরে আর সেটা মনে করা সম্ভব না। হয়ত খুঁজে পাওয়াও হয়ে গিয়েছে সেই যখের ধন। কিন্তু যাত্রা আর ফুরায় নি। একের পর এক নতুন, অযাচিত গন্তব্য এসে জুড়ে গেছে পথের সাথে। পথ হয়েছে আরও দীর্ঘ, আরও জটিল। ঘরে ফেরার যে রাস্তায় মণি মুক্তো ছড়াতে ছড়াতে এসেছিলাম, ফেরার পথ চিনব বলে, সেই পথে আজ ঘন জংলা ঝোপ জন্মেছে। যেন একটা আস্ত অরণ্য গ্রাস করেছে, ঘরে ফেরার পথ চিহ্নগুলো।  এমন করেই দিনে দিনে যাত্রা পথটা ঘর হয়ে যায়